ফরজ নামাজের কাজা পড়ার নিয়ম - কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম

আমরা এই পোস্টে আলোচনা করব কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম। নামাজ এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবাদাত। আমাদের মুসলমানদের কাছে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম হলো নামাজ।প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দিনে পাঁচ রাকাত নামাজ ফরজ। কখনো কখনো দুরে কোথাও যাওয়ার জন্য অথবা আমাদের নিজেদের খামখেয়ালিপনার কারণে জামাতের সাথে নামাজ আদায়  করা হয় না।

ফরজ নামাজের কাজা পড়ার নিয়ম

জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে না পারা এবং সেই অক্তের নামাজ পরে একা একা আদায় করাকেই বলা হয় কাজা নামাজ। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয় বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ ফরজ নামাজের কাজা পড়ার নিয়ম - কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম 

কাজা নামাজ অর্থ কি

কাজা শব্দের অর্থ হলো বিলম্ব করা। অর্থাৎ যে নামাজ সময় মত পরতে না পারা এবং একটু বিলম্ব করে পড়া কে কাজা নামাজ বলে। অর্থাৎ ওয়াক্ত ছুটে যাওয়ার পরে একটু বিলম্ব করে আদায় করাকে কাজা আদায় করা বলা হয়। যে মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই নামাজের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত। এ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

শয়তানের ধোঁকায় না হয় দূরে কোথাও যাওয়া বা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সময় মত নামাজ পড়তে না পারা এবং সেই নামাজ একটু দেরি করে আদায় করাকে কাজা নামাজ আদায় করা বলে। যদি আমাদের ফরজ নামাজ রাত হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে পরবর্তীতে নামাজ আদায় করতে হবে।

কাজা নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হবে

কাজা নামাজের নিয়ত করতে হবে মূলত আপনি প্রত্যেক ওয়াক্তে নামাজ যেভাবে নিয়ত করেন ঠিক সেভাবেই কাজা নামাজের নিয়ত করতে হবে শুধু মনে সংকল্প করবেন নামাজ সময়মতো করতে পারেনি এখন বিলম্বে আদায় করছি একটুকু কথা বাড়তি আপনার মনের ভেতরে সংকল্প করবেন।

নিয়ত যে মুখে উচ্চারণ করে করতে হবে এমনটা নয় আপনি মনে মনে নিয়ত করতে পারেন। নিয়ত মনে সংকল্প করার কাজ। আপনি মনে সংকল্প করবেন আমি ফজরের নামাজ ঘুমিয়ে থাকার কারণে পড়তে পারেনি তা এখন আদায় করছি। এই কথাই আপনি মনের ভেতরে সংকল্প করবেন তাহলেই এটাই আপনার কাজা নামাজের নিয়ত হিসাবে যথেষ্ট। 

কাজা নামাজ কখন পড়তে হবে

কাজা নামাজ কখন পড়তে হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন" যদি তোমরা সালাত আদায় করতে ভুলে যাও তবে যখনই তোমাদের স্মরণ হবে তখনই সালাত আদায় করে নেবে" অর্থাৎ সময়মতো করতে না পারলে ঘুমে থাকার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে তাহলে যখন সময় হবে বা যখনই মনে পড়বে তখনই সেই ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে এটা হাতে রেখে দেওয়া যাবেনা।

ফরজ নামাজ কখনো পরে পড়ে নিব এই বলে রেখে দেওয়া যাবেনা। আপনি যদি কখনো ফজরের নামাজ সময়মত না পড়তে পারেন তাহলে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে অজু  করে আপনাকে সে নামাজ আদায় করতে হবে। আর এটাই হল কাজা নামাজ আদায় করার সময়। 

কাজা নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে কাজা নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় আপনি অন্যান্য ফরজ নামাজ কিভাবে আদায় করেন ঠিক সেভাবে আদায় করতে হবে। আপনি চাইলে প্রত্যেক নামাজের আগে পরে সুন্নত নামাজ গুলো আছে এই সুন্নত নামাজ গুলো আপনি চাইলে ফরজ নামাজের আগে আদায় করে নিতে পারবেন। শুধুমাত্র ফরজ নামাজ আদায় করেন কাজা নামাজ হিসেবে তাহলে যথেষ্ট হবে।

যেমন আপনি যদি ফজরের দুই রাকাত নামাজ ঘুমের কারণে অন্য কারণে মিস করবেন তাহলে তাহলে আপনার যখন মনে পড়বে ঠিক তখনই সালাত আদায় করে নিতে হবে যেমনটা জামাতের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন ঠিক সেভাবেই কাজা নামাজ ও আদায় করতে হবে। কাজা নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। 

জুম্মার নামাজ কাজা হলে কি করব

জুম্মার নামাজ কারো যদি সময়মতো বা জামাতের সাথে আদায় করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই তাকে যোহরের চার রাকাত নামাজ পড়তে হবে অর্থাৎ জুমার নামাজ ছুটে গেলে কাজা হিসেবে জুমার নামাজ পড়া যায় না এটা অবশ্যই আপনাকে জোহরের চার রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। মহিলাদের জন্য অবশ্যই জুমার নামাজ পড়তে হবে না যদি একা একা করে আর যদি জামাতে গিয়ে পড়ে তাহলে সে অবশ্যই জুমার সালাত আদায় করতে পারবে। 

একাধিক ওক্তের নামাজ কাজা হলে কি করণীয়

যদি কারো দিনে একাধিক অক্তের নামাজ ছুটে যায় তাহলে ওক্ত অনুযায়ী একের পর এক ওক্ত কাজা নামাজ পড়ে নিতে হবে। যেমন জোহরের নামাজ ছুটে গেছে আসরের নামাজ ছুটে গেছে মাগরিব ছুটে গেছে এবার ইশা ওক্ত দিয়ে আপনি বাকি তিন ওয়াক্তে নামাজ একসাথে আদায় করার চিন্তা করেছেন তাহলে আপনাকে আগে যোহর আদায় করতে হবে তারপর আসর আদায় করতে হবে তারপর মাগরিব আদায় করতে হবে এরপরে এশার নামাজ পড়তে হবে।

আপনি আগেই এশার নামাজ পড়ে নিবেন তারপরে চিন্তা করবেন বাকিগুলো একে একে পড়বো এভাবে হাতে রেখে দেওয়া যাবেনা।আপনাকে অবশ্যই আগে আগের নামাজ গুলো পড়ে নিতে হবে।যদি এরকম হয় আপনি মসজিদে গেছেন এশার ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য কিন্তু হাতে ২,৩ ওক্ত নামাজ বাকি আছে কিন্তু মসজিদে গিয়ে দেখলেন যে ইমাম সাহেব এশার নামাজ শুরু করে দিয়েছে এখন আপনি কি করবেন?

তখন আপনি ওই ওয়াক্তের ফরজ নামাজ টা ইমামের পেছনে পড়ে নেবেন এর পরে আপনি বাকি ওক্তের কাজা নামাজ গুলো করতে পারবেন। আর যদি মসজিদে গিয়ে দেখেন এখনো দশ পনেরো মিনিট সময় আছে তাহলে আপনাকে আগে আগের ওক্তের নামাজ গুলো আদায় করতে হবে তারপর জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করতে হবে।

জীবনে অনেক নামাজ কাজা হয়েছে কি করণীয়

সময় থাকতে কখনো কাজা নামাজ হাতে রেখে দেওয়া যাবেনা।অবশ্যই কাজা নামাজ আগে পড়ে নিতে হবে। অনেকেই বলে থাকেন জীবনে অনেক নামাজ কাজা হয়ে গেছে ইচ্ছা করে হোক ইচ্ছা না করে হোক সেগুলো করতে পারেনি এখন সবগুলো হিসাব করে করে পড়ার সময় হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কি করবেন না? জানতে পারছি কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম।

এক্ষেত্রে যা করবেন ফরজ সালাতের আগে-পরে যত পারবেন নফল নামাজ আদায় করবেন এবং আল্লাহ তালার কাছে তওবা-ইস্তেগফার পড়বেন এতেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ বেশি বেশি নকল পড়লে ফরজের ঘাটতিগুলো এই নফল দিয়ে পূরণ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আপনাকে প্রত্যেক ওক্ত হিসাব করে করে কাজা নামাজ আদায় করতে হবে না।

আমাদের শেষ কথা

নামাজ হল ফরজ ইবাদত তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই ফরজ ইবাদত পালন করা উচিত। যদিও অনেক বিভিন্ন কারণে অনেক ওক্তের নামাজ ছুটে যায়। যদি কখনো এরকম হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই পরবর্তীতে কাজা নামাজ পড়ে নিতে হবে। সেই জন্য কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে রাখতে হবে।

আশা করি আপনারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেহেতু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই অবশ্যই নিজের মুসলিম হিসেবে আমাদের বিষয়টি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url