শীতকালে রোগ থেকে বাঁচার ১৫টি উপায়

শীতকালে রোগ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম রোগে আক্রমণ করে থাকে তাই এ রোগগুলো থেকে বাঁচতে আমাদের অবশ্যই এ রোগ গুলো সম্পর্কে সতর্কতা মেনে চলতে হবে। আপনি যদি এই রোগ গুলো সম্পর্কে সতর্ক না হয়ে থাকেন তাহলে আপনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

শীতকালে রোগ থেকে বাঁচার ১৫টি উপায়

তাই আমাদের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের আমরা শীতকালে রোগ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে এবং  পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানাবো।

সূচিপত্রঃ শীতকালে রোগ থেকে বাঁচার ১৫টি উপায়

শীতকালে মানুষ অসুস্থ হয় কেন

শীত আসলে মানবদেহে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে এবং মানুষ খুব সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কারণ বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। কোন সময় শীত এবং কোন সময় বর্ষা এবং কোন সময় গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরমে ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে কানে সময় আমাদের শরীরের শক্তি সঞ্চালন ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় এবং এ সময় রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতাও বাধাগ্রস্ত হয়।

আরো পড়ুনঃ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার দশটি উপায়

এ বিষয়টি অনেকেই হয়তো জানে না তার জন্য অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে শীতকালে মানুষ অসুস্থ হয় কেন? হেমন্তর শেষের দিক থেকেই শীতের আমেজ পাওয়া যায় এবং শীতের শুরুর দিকে আবহাওয়া ঠান্ডা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আপনি খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং বিভিন্ন রোগ আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে খুব সহজেই। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে এ সময় আদ্র বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আপনার ঠান্ডা বা ফ্লু জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শীতকালে যে রোগ গুলো আমাদের শরীরে আক্রমণ করে থাকে সে রোগগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

শীতকালে যেসব রোগগুলো হয়ে থাকে

শীতকালে আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই শরীরে আক্রমণ করে থাকে। তাই শীতকালে যেসব রোগগুলো হয়ে থাকে সে সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। গ্রীষ্মের গরম আপনার শরীর অস্বস্তিকর করে তুললেও শীতকালে আপনি অনেক আরাম অনুভব করেন। কিন্তু জানেন কি প্রতিবছরই আমাদের দেশে শীতকালেই রোগ বালাই অনেক বেশি হয়ে থাকে।

আর এই সময়ে ছোট বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের অসুস্থ হয়ে পড়াটা অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার এবং অনেক জটিলতা ও সৃষ্টি করতে পারে।কারণ চলছে শীতের মৌসুম আর এই মৌসুমে যদি আপনি শীতকালে রোগ গুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন তাহলে আপনি এরূপ গুলো থেকে বাঁচতে পারবেন।

সর্দি কাশিঃ শীতকালে আমাদের বিভিন্ন রোগব্যাধির মধ্যে প্রধান হলো ঠান্ডা জনিত সমস্যাগুলো যেমন সর্দি কাশি এজমা জ্বর, টনসিল, ডায়রিয়ার মত ঠান্ডা জনিত রোগগুলো হয়ে থাকে। আর এইসব সমস্যাগুলো ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে এবং শুষ্ক বাতাসের ফলে আমাদের শরীরে আক্রমণ করে থাকে।

ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জাঃ সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে তীব্রতর উপসর্গ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। সাধারণ সর্দি-কাশির অতিরিক্ত উপসর্গ হিসাবে বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে এ রোগ ছড়ায় এবং এর একটি শীতকালে তীব্র আকার ধারণ করে এবং এর রং বদলাতে থাকে।  ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে প্রতিবছর টিকা নেওয়া হয়।

কোল্ড এলার্জিঃ অনেকেরই শরীরে অ্যালার্জি জনিত সমস্যারও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কারণ শীতকালে আমাদের চামড়া শুষ্ক হয়ে থাকে আর এ সময় শরীরে চুলকানির মত অনুভুতি হয় এবং বাতাসের সাথে ধুলোবালি মিশে অনেক সময় আমাদের শরীরে এলার্জি দেখা দিয়ে থাকে।

পাতলা পায়খানাঃ শীতকালে পাতলা পায়খানা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার কারণ শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া অনেক সময় আমাদের পাতলা পায়খানার মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

চামড়া শুষ্ক ভাবঃ শীতকালে বাতাসের সাথে সাথে আমাদের শরীরের চামড়ার শুষ্কতা ভাব চলে আসে তাই এই সময় আপনি বিভিন্ন ক্রিম ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যথা বা বাত ব্যথাঃ শীতকালে বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে ব্যথা বাত ব্যথা প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই যাদের এ সমস্যাগুলো আগে থেকে রয়েছে তারা বিশেষ করে শীতকালে সতর্ক থাকুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।

ম্যালেরিয়াঃ ছোট বাচ্চা বা বয়স্কদের এই সময় এই ঠান্ডা জনিত সমস্যাটি অনেক আকারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং সঠিক সময়ে যদি এটি চিহ্নিত না করতে পারেন এবং চিকিৎসা না নিতে পারেন তাহলে এটি ম্যালেরিয়ায় পরিণত হতে পারে।

ডেঙ্গুঃ শীতকালে কিছু মশাবাহিত রোগ আমাদের শরীরে আক্রমণ করে থাকে। ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় অনেক স্থানে মশার প্রকোপও বাড়ে। ডেঙ্গু বর্ষাকালের রোগ হলেও শীতকালেও এটি প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে।

হাঁপানি বা অ্যাজমাঃ শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া ও বাতাসের কারণে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে অনেকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা আছে, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার ব্যবহার করা। মনে রাখতে হবে অ্যাজমায় ইনহেলার সবচেয়ে আধুনিক এবং শুরুর দিকের চিকিৎসা যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ভয়ের কোন কারণ নেই।

অনিদ্রাঃ যারা দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য শীতে বিশেষ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন একটি হল অনিদ্রা। তাই এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।

শীতকালে সর্দি কাশি ও জ্বর প্রতিরোধের উপায়

শীত আসলেই আমাদের সর্দি কাশি জ্বর এর একটি প্রতিনিয়ত হতে থাকে এবং এ রোগের সাথে আমরা অনেক পরিচিত শীত আসলে এই রোগটি আমাদের শরীরে খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে তাই শীতকালে সর্দি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আপনাদের আমরা জানাবো।

শীত মানে ঠান্ডা আবহাওয়া আর এ সময় ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে আমাদের সব সময় গরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং অনেক সময় আমাদের শরীরে জীবাণু প্রবেশের কারণে সর্দি কাশির মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাই আপনি সর্বদা আপনার হাত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন এবং হাতটি ঘন ঘন ধোয়ার চেষ্টা করবেন আর আপনার ব্যবহারকৃত পানিটি অবশ্যই হালকা গরম পানি হতে হবে।

আরো পড়ুনঃ সঠিকভাবে ঘুমানোর ১৩ টি উপায়

কারন শীতের সময় ঠান্ডা পানির কারণে আমাদের বিভিন্ন রোগ আক্রমণ করে থাকে। তাই এ সময় খাওয়ার পানি বা গোসলের পানি এবং ব্যবহার ব্যবহারকৃত পানি গুলো হালকা গরম করে ব্যবহার করতে হবে। এবং সর্দি কাশি এড়াতে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকার উপর নজর রাখতে হবে এ সময় আপনি ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল গুলো বেশি করে খেতে পারেন কারণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো এবং ফলমূল গুলো আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সমস্যা থেকে প্রতিরোধ করে।

এছাড়াও আদার মতোই রসুনও সর্দিজ্বর নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। এককাপ মতো পানিতে একটি কোয়া ফেলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই কুসুম গরম পানি দিনে দুইবার খেলে জ্বর কমাতে সাহায্য করে।শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে এই ড্রাই ফ্রুট। সর্দি-কাশি প্রতিরোধে পরিচিত টোটকা তুলসি-মধু। জ্বর হলে একটি-দু’টি পাতা চিবিয়ে খেলেও উপকার হবে। এবং জ্বরের মুখে দু একটি করে কিসমিস চিবিয়ে খেতে পারেন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

শীতকালে জ্বর সর্দি কাশি থেকে বাঁচতে আপনি কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন যা থেকে আপনি খুব সহজেই সর্দি কাশি বা জ্বর থেকে আসতে পারেন এ সময়ে প্রশ্ন পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ এ সময়ে উষ্ণ পরিবেশ এবং গরম কাপড় চোপড় পড়লে আপনি সর্দি কাশি জ্বর থেকে খুব সহজেই দূরে থাকতে পারবেন।

শীতকালে সর্দি কাশি হলে অনেক সময় আমাদের গলা ব্যথা করে তাই এই সময়ে বিশেষ করে গলার যত্ন নিন কারণ গলা ব্যথা একটি ঠান্ডা জনিত উপসর্গ তাই এ সময় আপনি লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা অথবা লেবু এবং মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যাথা দ্রুত উপশম হতে পারে।

শীতকালে রোগ প্রতিরোধে কি করণীয়

শীতকালে রোগ প্রতিরোধে কি করণীয় এ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানতে চাইবেন কারন শীতে আমাদের রোগ জীবাণুর প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই এ সময়ে আমাদের শরীরের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন এবং সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। তাই শীতকালে রোগ প্রতিরোধে কি করণীয় সে সম্পর্কে আপনাদের আমরা জানাবো।

শীতকাল আরামদায়ক হলেও এ সময় আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে আমাদের শরীরে একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন দরকার। শীতকালে রোগ প্রতিরোধ দূর করতে আমাদের ভিটামিন সি জাতীয় ফলের জুস বা ফলগুলো খেতে হবে।

এছাড়াও গরম কাপড় চোপড় পরিধান করা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে এ সময়ে ধুলাবলের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধে থাকে। তাই সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং হাত ধোঁয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ নোংরা হাতের মাধ্যমে আমাদের কেটে জীবাণু গিয়ে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হতে পারে।

শীতকালে অবশ্যই খাদ্য তালিকার দিকে আপনাকে নজর রাখতে হবে বেশি বেশি তরল পানিও খাবারগুলো পান করতে হবে।প্রচুর পরিমাণ পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে পানিশূন্যতা রোধ করলে ঠান্ডা থেকে দ্রুত নিষ্পত্তি লাভ করা যেতে পারে। ঠান্ডার সময় সর্দি কাশি এবং গলা ব্যথা যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি আদা চা বা গরম পানি দিয়ে মধু মিশিয়ে খেলে অনেকটাই স্বস্তি লাভ করবেন।

আদার মতো রসুন ও ঠান্ডা জ্বর সারাতে বিশেষ কার্যকরী। এবং শীতকালে উষ্ণ পরিবেশে থাকার চেষ্টা করবেন। কারণ উষ্ণ পোশাক ও উষ্ণ পরিবেশ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এবং এ সময় পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।

শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৫টি উপায়

শীতকালে যখন আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে তখন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে আমাদের দেহে প্রবেশ করে তখন খুব সহজে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শীতকাল ভাইরাস অনুকূলের আয়তায় থাকে। কারণ ভাইরাস সব সময় শুষ্ক পরিবেশ পছন্দ করে আর এই জন্য খুব সহজে শীতকালে বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমিত রোগ গুলোতে আমরা আক্রান্ত হয়ে থাকি।

তাই এর শীতকালে রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে সকল নিয়মগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

১। ভিটামিন সি যুক্ত ফলের জুস পান করাঃ শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে আপনি ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ যুক্ত ফলের রসগুলো সঠিক নিয়মে পান করবেন। কারণ এই দুই ভিটামিনের মাধ্যমে আপনার শীতকালে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করবে। এবং রক্তের সাদা কোষগুলো বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

২। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুনঃ পানির বিকল্প কিছু নেই তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা জরুরী কারন আমাদের শরীরে পানি শূন্যতার কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন রয়েছে।

৩। নিয়মিত শরীরচর্চাঃ নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা হার্টকে শক্তিশালী এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাই আপনার শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন নিয়ম মেনে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করুন।

৪।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তার বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আমাদের ত্বকের উপরিভাগে যেসব অণুজীব বাস করে সেসবের আমাদের দেহের ভেতের প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগে না। সুতরাং নিয়মিত গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আর প্রতিদিন একাধিকবার হাত ধুতে হবে রোগ-জীবাণুর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে।

৫। নিয়ম করে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘুম হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় কারণ আপনার শরীরে ঘুমের ঘাটতি থাকলে আপনি কখনো সুস্থ থাকতে পারবেন না তাই আপনাকে প্রতিনিয়ত দিনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম পারতে হবে। আপনি যেদিন প্রতিনিয়ত সবথেকে আট ঘন্টা ঘুমান তাহলে স্ট্রোক হরমোনের মাত্রা কমে আসে। প্রচার তো পরিমাণ ঘুম আপনার শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তুলে।

৬। স্ট্রোক এড়িয়ে চলুনঃ কারণ এই স্ট্রোক বা মানসিক টেনশন আপনার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে এবং শরীর দুর্বল করে তুলবে যার ফলে এ সময় আপনার শরীরে বিভিন্ন রকমের রোগের সৃষ্টি হতে পারে যা তিলে তিলে আপনার শরীরের সমস্ত অংশগুলো নষ্ট করে দিতে পারে এবং মারাত্মক রোগ বাসা বাঁধতে পারে।তাই শরীরকে সবসময় চাঙ্গা এবং মন ফুর্তি করে রাখুন এতে করে আপনার মন সুস্থ থাকবে এবং দেহ সুস্থ থাকবে।

৭। রসুনঃ শীতকালে রসুন আপনার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার একটি বিশেষ উপায় রসুন এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রসুন আপনার রক্তের সাদা কোষ উৎপন্ন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে আপনার শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

৮। পেঁয়াজঃ শীতকালে রসুনের পাশাপাশি পিঁয়াজ ও বিশেষ উপকারী একটি উপাদান।পেঁয়াজে আছে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য ফাইটোক্যামিকেল। যা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বৃদ্ধিতেও সহায়ক এই উপাদানগুলো। আর দেহে পিএইচ এর মাত্রার ভারসাম্যও রক্ষা করে। এর ফলে দেহের খনিজ শুষে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়।

৯। গাজরঃ শীতকালে বিশেষ একটি ফল গাজর এটি গুণে মানে অনেকটাই বিশেষ একটি সবজি। এটি শীতকালে সহ সারা বছরই উৎপাদন হয়ে আসছে। এর উপকারিতা রয়েছে বহু গুণ।গাজরে আছে ভিটামিন এ যা রক্তের সাদা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এছাড়া এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা দেহের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়ায়। যা আবার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে কার্যকরভাবে।

১০। বাদামঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বাদামের তুলনা নেই এটি যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে ঠিক পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। নিয়মিতভাবে চীনাবাদাম বা কাজুবাদাম খেলে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়।

বাদামে থাকা ভিটামিন ই একটি বিস্ময়কর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার কার্যক্রমে সহায়তা করে এবং বয়সের ছাপ কমিয়ে আনে। বাদামে থাকা সেলেনিয়াম যা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করে।

১১। আদা চাঃ শীতকালে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এক কাপ আদা চাই যথেষ্ট।আদা চা দেহে টি-সেল এর উৎপাদন বাড়ায়। যা রোগ-প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি র‌্যাডিক্যালসরা দেহের যে ক্ষয় সাধন করে তা সারিয়ে তোলে। আদা চা এমন একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ভেষজ চা যা আমাদের শরীরের কার্যক্রম সমূহের ভারসাম্য রক্ষা রাখে।

১২। সাইট্রাসজাতীয় ফলঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাইট্রাস জাতীয় ফল বেশি বেশি খেতে পারেন।সাইট্রাস  জাতীয় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সেরা খাদ্য। এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কোষেদের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেহে ফ্রি র‌্যাডিক্যালদের ক্ষয় সারিয়ে তুলতে পারে।

১৩। সবুজ তাজা শাকসবজিঃ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত শাকসবজি আপনার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সবুজ শাকসবজি তুলনা নেই।এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আঁশ যা দেহকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে এমন কিছু রাসায়নিক আছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে নিয়মিত সচল রাখতে কাজ করে যাই।

আরো পড়ুনঃ ব্লগার নাকি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগিংয়ের জন্য কোনটি সেরা

১৪। স্যামন মাছঃ স্যামন বা রুইজাতীয় মাছে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং ডিএইচএ উপাদান। যা রক্তের সাদা কোষগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড হার্ট এবং অন্যান্য আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকেও ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়। তারক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে  স্যামন জাতীয় মাছ খাদ্য তালিকায় রাখুন।

১৫। ধুমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করুনঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই আপনাকে ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে আপনার শরীরে ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না এবং এ সময় আপনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা নষ্ট করে।

এ সময় রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।ধুমপান দেহে অক্সিজেনের মাত্রায় হস্তক্ষেপে করে এবং নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। নিকোটিন ফুসফুস এবং হার্টের কোষগুলোকে ধ্বংস করে। ধূমপান আপনার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা আজীবনের মতো নষ্ট করে দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url