লাইলাতুল বরাত এর আমল সমূহ

আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব লাইলাতুল বরাত এর আমল নিয়ে। আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত লাইলাতুল বরাত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কত রাকাত নামাজ পড়তে হয়? এবং কোন সূরা দিয়ে পড়তে হবে কি আমল করা আমাদের জন্য উত্তম হবে।

লাইলাতুল বরাত এর আমল সমূহ
এক কথায় আজকে আপনারা জানতে পারবেন লাইলাতুল বরাতের সব খুঁটিনাটি বিষয়ে করব। মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন ইনশাআল্লাহ সবকিছু ভালোমতো জানতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ লাইলাতুল বরাত এর আমল সমূহ

লাইলাতুল বরাত অর্থ কি

শবে বরাত একটি ফারসি শব্দ এর আরবি হলো লাইলাতুল বরাত। বরাত শব্দের অর্থ মুক্তি এবং লাইলাতুল অর্থ রাত অর্থাৎ লাইলাতুল বরাত অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা অভাব-অনটন রোগ শোক বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান জানান এবং তার নিকট চাইলে তিনি এসব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

তাই এই রাতকে লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়ে থাকে। কয়েকটি বিশেষ রাতের মধ্যে লাইলাতুল বরাত অন্যতম মুসলিম ধর্মবলম্বীদের কাছে। আশা করি আপনারা সকলেই লাইলাতুল বরাত অর্থ কি এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এজন্য মুসলিম হিসেবে আমাদের সবার বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

লাইলাতুল বরাত কবে

শাবান মাসের ১৫ রাত অর্থাৎ ১৪ই সাবান দিবাগত রাত হলো লাইলাতুল বরাত। হাদিস শরিফে আলোকে লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে পাঁচটি আমল এর কথা প্রমাণিত হয়। এই রাত মুসলিম ধর্মঅবলম্বী দের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাত। সাধারণত এই রাতে আমরা আল্লাহতালার কাছে যা চাই তিনি আমাদের ইচ্ছা এবং স্বপ্নগুলো পূরণ করেন।

এই রাতে আল্লাহতালার কাছে তার কোন বান্দা যদি খাস নিয়তে কিছু চাই এবং তাতে যদি তার মঙ্গল থাকে তো আল্লাহ তা দিয়ে থাকেন। বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম গণ এই রাতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের মনের সকল চাওয়া পাওয়া গুলো চেয়ে থাকেন। 

প্রথম আমলঃ নফল নামাজ পড়া

লাইলাতুল বরাতে যেসব আমল করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন তার মধ্যে প্রথমটি হলো ১৪ই সাবান দিবাগত রাতে জাগরণ করে নফল নামাজ ও বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী জিকির আজগর ইবাদতে লিপ্ত থাকা। এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করুন। এখন অনেকের মাঝেই এই নামাজ  নিয়ে প্রশ্ন থাকে । যে এই নামাজ কিভাবে আদায় করতে হবে? কত রাকাত আদায় করতে হবে? কোন সূরা দিয়ে আদায় করতে হবে? এই রাতে যে নামায আদায় করবেন সেটি মূলত নফল নামাজ।

আপনি অন্যান্য নফল নামাজ কিভাবে আদায় করেন ঠিক একই ভাবে এই নামাজ আদায় করতে হবে।অনেকের মাঝে প্রশ্ন থাকে এই নামাজের নিয়ত কিভাবে করবেন? এই নামাজের নিয়ত অন্যান্য নকল নামাজের নিয়ত করে নামাজ পড়েন ঠিক একইভাবে নিয়ত করতে পারেন। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করতে হবে এটা বাধ্যতামূলক নয়।

আপনি কেন নামাজ পড়ছেন নামাজ পড়ছেন সেটা আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই জানেন আপনার অন্তরে তা জানা আছে তাই আল্লাহ তা'আলা আগে থেকেই তা ভালোভাবে জানেন তাই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত না করলেও হবে।যে কোন সূরা দিয়ে নামায আদায় করা যাবে কোন নির্দিষ্ট সুরা নাই যে সূরা দিয়ে নামায আদায় করতে হবে।অনেকে মনে করেন এই নামাজ পড়ার জন্য আলাদা কোন সূরা রয়েছে কিন্তু না যে কোন সূরা দিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন। 

আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত এই নামাজ ১২ রাকাত পড়তে হয় আসলে এমন কিছুই নয় আপনার যত রাকাত ইচ্ছা আপনি তত রাকাত আদায় করতে পারবেন। আপনি চাইলে দুই রাকাত আদায় করতে পারেন চার রাকাত পড়েন আট রাকাত পারেন আপনার যত ইচ্ছা তত রাকাত আপনি আদায় করতে পারেন কোন সীমাবদ্ধতা নেই।

আপনি দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা তত রাকাত আদায় করতে পারেন। যত বেশি রাকাত নামাজ আদায় করবেন তত বেশি নেকী লেখা হবে আপনার আমল নামায়। এই নামাজ নিজের বাড়িতে পড়াই উত্তম আপনি চাইলে মসজিদে গিয়ে পড়তে পারেন কিন্তু নিজের বাড়িতে ঘরের ভেতরে এই নামাজ আদায় করায় বেশি উত্তম। 

দ্বিতীয় আমলঃ বেশি বেশি দোয়া করা

বেশি বেশি দোয়া করা। গুরুত্বপূর্ণ আমলের মধ্যে অন্যতম হলো এ রাতে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা। বিশেষ করে তাহাজ্জোতের সময় আল্লাহ তাআলার কাছে মন খুলে নেক নিয়তের বেশি বেশি চোখের পানি ফেলে দোয়া করা। কারণ তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন। এবং বলতে থাকেন কে আছো আমার কাছে চাও আমি তা দেব।

তাই পবিত্র এ রাত্রে তাহাজ্জোতের মত উত্তম সময় কাজে লাগান এবং আল্লাহ তালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করেন। এর জন্য আপনি দুইটি জিনিস একসাথে পাবেন এক হল এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন।

তাহাজ্জুদের সময় আপনি আরো কিছু আমল করতে পারেন যেমন ইসমে আজম। ইসমে আজম এমন একটি আমল করলে আল্লাহ তা'আলা আপনি যা চাইবেন তাই আপনাকে দিবেন।আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তাহাজ্জুদের সময় ইসমে আজম আমল করে যদি সেই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু চাই আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন।

তাই আপনি যদি লাইলাতুল বরাত আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন এবং তাহাজ্জুদের সময় দোয়া করেন তাহলে একাধিক সুযোগ একসাথে পাচ্ছেন তাই এই সুযোগটি কাজে লাগাও আমাদের সবারই উচিত। একটি হাদিসে এসেছে এই রাতে আল্লাহতালা মুশরিক বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাই তাকে মাফ করে দেন।

এই রাতে মানুষের এক বছরের হায়াত রিজিক সবকিছু নির্ধারিত হয়ে থাকেন। এড়াতে আল্লাহতালার কাছে বেশি বেশি করে দোয়া কর আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত। এ রাতে কবর জিয়ারত করা যায়। কবর জিয়ারত করতে হলে একাকী করতে হবে দলবল নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।

তৃতীয় আমলঃ মাগফিরাতের দোয়া করা 

এই রাতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন। তাই আমাদের উচিত আমাদের আত্মীয় স্বজন এবং সকল মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা। কারণ কবরে কে কোন অবস্থায় আছে আমরা কেউ জানিনা এক আল্লাহ ছাড়া।

তাই সকলের জন্যই মাগফিরাতের দোয়া করা। কারণ এ রাতে আল্লাহতালা দোয়া কবুল করেন।এবং দান-খয়রাত করা। দান-খয়রাত ও সাতকার মাধ্যমে বিপদ আপদ দূর হয়। তাই এই রাতে বেশি বেশি দান-সাদকা করার চেষ্টা করব। 

চতুর্থ আমল নফল রোজা রাখা

লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ ১৫ শাবান নফল রোজা করা উত্তম একটি কাজ। আগের রাতে বিভিন্ন রকম নফল ইবাদত করবেন নামাজ পড়বেন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে নিয়োগ করবেন পরেরদিন নফল রোজা করবেন। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আশায় 15 শাবান সারাদিন রোজা রাখা।

২০২৪ সালে কত তারিখে রোজা রাখব

২০২৪ সালে অর্থাৎ বর্তমান বছরে রমজান মাস শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং মধ্যপ্রাচ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে ১০ এপ্রিল। যেহেতু আরবি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল তাই চাঁদ দেখা না গেলে সাধারণত এই বিষয়টি বলা অনেক কঠিন। কিন্তু এটা সত্য যে বাংলাদেশে রমজান মাস শুরু হবে মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

এ আমলগুলো ছাড়া অন্য কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় আমাদের সমাজে দেখা যায় এ রাতে মানুষ হালুয়া তৈরি করে মোমবাতি জ্বালাই, আতশবাজি পটকা ফোটানো এগুলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বিদআত এবং গুনাহের কাজ তাই এই সমস্ত কাজ গুলো থেকে আমরা বিরত থাকব। এ রাতে আমরা বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করব আল্লাহ তা'আলার জিকির আজগার করব। দোয়া করব এবং তাহাজ্জুদের সময় বেশি বেশি দোয়া করব

আমাদের শেষ কথা

আমরা জানি যে লাইলাতুল বরাত এবং রমজান মাস হল আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে লাইলাতুল বরাত এর মত সম্পর্কে জানতাম তাহলে আমরা অবশ্যই এই দিনটিতে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মগ্ন থাকতাম। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বেশ কিছু তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।

সাধারণত এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট আপনাদেরকে ফলো করতে হবে। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করলে আপনি এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url