সঠিক ভাবে ঘুমানোর ১৩টি ইসলামিক নিয়ম

 বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করব ঘুমানোর সঠিক ইসলামিক নিয়ম সমূহ ও নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নত তরিকায়ে কিভাবে ঘুমাতে হয়। একজন মুমিনের প্রতিটি কাজেই রয়েছে। ঘুমো এর ব্যতিক্রম নয় ইসলামের দৃষ্টিতে রাতে ঘুমানোর আগে কিছু করণীয় ও কিছু বর্জনীয় খাদ রয়েছে।

সঠিক ভাবে ঘুমানোর ১৩টি ইসলামিক নিয়ম

সেগুলো আমি আপনি করে যদি ঘুম যায় ঘুমের মধ্যেও আমাদের এবাদত হতে থাকবে। আর এই কাজগুলো জানা একজন মুসলিম হিসাবে অতীব জরুরী। চলুন আমরা জেনে নেই ঘুমানোর সঠিক ইসলামিক নিয়ম সমূহ।

সূচিপত্রঃ সঠিক ভাবে ঘুমানোর ১৩টি ইসলামিক নিয়ম সমূহ

রাতে দেরি করে না ঘুমানো!

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম হল রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো। হাদীসে এসেছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিসঃ ৪৮৭৯) তাই রাতের বেলা কোন অহেতুক কাজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা কোন বিনোদনের সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত।

রাতে ঘুমানোর আসল সময় হল এশার নামাজ পরেই ঘুমিয়ে পড়া । আমাদের প্রিয় নবি এশার পর কোন কাজ করতেন না ঘুমিয়ে পরতেন। রাত জাগলে শারীরিক ও মানসিক দুটোই ক্ষতি হয়। যারা বেশি রাত জেগে থাকে তাদের মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়। মেজাজ সব সময় খারাপ থাকে, একটু কথায় রেগে যাওয়া, একাকীত্বে ভোগা অসুখী মনোভাব ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

একাকী ঘরে না ঘুমানো!

কোন ঘরে একা না ঘুমানোর বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ৫৬৫০) আমরা অনেকেই আছি যারা একা ঘরে ঘুমাতে পছন্দ করি কিন্তু যদি সম্ভব হয় তাহলে এই কাজটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ বসন্ত রোগ থেকে বাঁচার সাতটি উপায়

কারণ কিছু খারাপ দিন রয়েছে যেগুলো মানুষকে একা ফেলে বেশি ভয় দেখায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি পারেন তাহলে আপনার সঙ্গে কাউকে নিয়ে ঘুমাবেন অথবা ঘুমানোর আগে অবশ্যই দোয়া এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা চেয়ে ওযু করে ঘুমাবেন।

খোলা আকাশের নিচে না ঘুমানো!

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি বেষ্টনী বিহীন ছাদে রাতে ঘুমাই, (কোন দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোন জিম্মাদারী নেই।(আবু দাউদ, হাদিসঃ ৫০৪১)

খাবারের পাত্র ঢেকে রাখা

রাতের বেলা ঘুমানোর আগে খাবারের পাত্র ঢেকে না রাখলে সেই খাবারের ওপর ইঁদুর তেলাপোকা বা অন্য কোন পোকা এসে হানতে পারে। ফলে তা থেকে ছড়াতে পারে মারাত্মক রোগ ব্যাধি। তাই মনে করে ঘুমানোর আগে সব ধরনের খাবার কে ঢেকে রাখতে হবে। যাতে করে কোন প্রকার পোকামাকড় তার ভিতরে ঢুকতে না পারে। 

ঘুমানোর আগে দরজা ভালোভাবে বন্ধ করা

রাতে ঘুমানোর আগে বাড়ির বা ঘরের দরজা খুব ভালোভাবে লাগানো অবশ্যক। রাতে দরজা খুলে ঘুমালে চোর ডাকাতের কবলে পড়তে হতে পারে। তাই অবশ্যই দরজা ভালো ভাবে লাগাতে হবে। লাগানোর পর দেখে নিতে হবে যে সঠিকভাবে লেগেছে কিনা। 

ঘুমানোর আগে সকল প্রকার বাতি নিভিয়ে দেওয়া

রাতে ঘুমানোর আগে রুমের ভেতরে থাকা সকল প্রকার বাতি নিভিয়ে দেওয়া। কারণ এগুলো থেকে অনেক সময় বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যেমন অগ্নিকাণ্ড তাই সতর্কতার সাথে সব ধরনের লাইট কোয়েল ইত্যাদি ভালো হবে নিভিয়ে দিতে হবে এবং ঘুমের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ঘরকে পুরো অন্ধকার করতে হবে। মজার বিষয় হলো অন্ধকারে অনেক ভালো ঘুম আসে।

পবিত্রতা অর্জন

রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয় ঘুমানো সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি কোন মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে উজু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয় দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা দান করে। (আবু দাউদ, হাদিস৫০৪২)

বিছানা ঝেরে নেওয়া

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন যদি তোমাদের মধ্যে কেউ বিছানায় যাই তখন সে যেন বিছানাটা ধরে নেই । কারণ সে জানে না এই বিছানায় তার অনুপস্থিতিতে বিপদজনক কোন কিছু আছে কিনা। তাই আমাদের উচিত আমাদের প্রিয় নবী মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানব এর কথা মত ঘুমানোর আগে আমাদের বিছানাটা ভালোভাবে ঝেড়ে নেওয়া

চোখের সুরমা দেওয়া

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতিরাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখের তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিসঃ ৪১) 

ডান কাত হয়ে শোয়া

ইসলামের সব ভালো কাজে যেহেতু ডান কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাই আমাদের ঘুমের বেলায় ডান দিক দিয়ে শুরু করতে পারি। ডান কাত হয়ে ঘুমালে আমাদের হৃদপিণ্ড পাকস্থলী ফুসফুস এর অবস্থান স্বাভাবিক থাকে যা বাম কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে বেশি উপকারী। ডান কাত হয়ে ঘুমানো হাট এর জন্য অনেক ভালো। যেহেতু মানবদেহের হৃদপিণ্ড বামদিকে অবস্থিত যখন আপনি বাম দিকে ঘুমাবেন তখন অনেক মানুষেরই হৃদপিন্ডের উপর এক্সট্রা চাপ পরে।

আরো পড়ুনঃ বসন্ত রোগের আটটি লক্ষণ

আপনি যখনই বাম কাত হয়ে ঘুমাবেন আপনার হৃদপিন্ডে এক্সট্রা চাপ পড়বে এটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে যাদের  হার্টের রোগ থাকে তাদের জন্য সব সময় ডান কাত হয়ে ঘুমানো উত্তম। এবং যাদের শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা থাকে তাদের ও ডান কাত হয়ে ঘুমানো উত্তম

দোয়া করা

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহ নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহু পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে। (আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৫৬) কমপক্ষে ঘুমানোর পূর্বে ছোট এই দোয়াটি পড়া উচিত

আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া 

অর্থ= হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো । 

এর সাথে সূরা ইখলাস ও সূরা নাস, ফালাক পড়ে শরীরে ফু দেওয়া। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিরাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখনই দুই হাত একত্র করে তাকে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফু দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে তিনবার হাত বোলাতেন। (বুখারী, হাদিসঃ৫০১৭)

আয়াতুল কুরসি পড়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তুমি যখন সজ্জা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষে থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। (বুখারী, হাদিসঃ২৩১১) ঘুমানোর সঠিক ইসলামিক নিয়ম সমূহ।

সঠিক ভাবে ঘুমানোর ১৩টি ইসলামিক নিয়ম

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন ব্যাক্তি সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।(বুখারী, হাদিসঃ৫০৪০)

সুরা মুলক পড়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে 30 আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষের সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সূরা টি হল তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মূলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি, হাদিসঃ২৮৯১) ঘুমানোর সঠিক ইসলামিক নিয়ম সমূহ।

আমরা সকলেই মুসলিম এবং সকলেই মাফ পেতে চাই। আমরা জানি না অতি ক্ষমাশীল আল্লাহ  তাআলা আমাদের কোন অজুহাতে মাফ করবেন তাই আমরা চেষ্টা করব আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা করতে বলেছেন এবং যেসব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা।

আরো পড়ুনঃ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার দশটি উপায়

হয়তোবা পরপারে সে কঠিন দিনে আল্লাহ তাআলা আমাদের এই ছোট এবাদত গুলোর কারণে মাফ করে দিতে পারেন। তাই আমরা সকলেই চেষ্টা করব ওপরের কাজগুলো রাতে ঘুমানোর আগে করে ঘুমানো। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘুমের মধ্যে থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আমলনামায় নেকি লেখা হবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url